অচলায়তনকে অতিক্রম করে নারীরা আইন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন : বিচারপতি ফারাহ মাহবুব

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ৬:২৫ অপরাহ্ণ
অচলায়তনকে অতিক্রম করে নারীরা আইন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন : বিচারপতি ফারাহ মাহবুব

বিশেষ প্রতিবেদক : ‘আমাদের দেশে একসময় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধারণা ছিল যে আইন পেশা নারীদের জন্য উপযুক্ত নয়। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় এই যে বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের নারীরা সেই অচলায়তনকে অতিক্রম করে স্বতঃস্ফর্তভাবে আইন পেশার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন’ সংবর্ধনায় বলেছেন আপিল বিভাগের নবনিযুক্ত বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) গত রোববার সকালে এক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিরা এ সময় বেঞ্চে ছিলেন। আইনজীবী ও আগত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আদালতকক্ষ ছিল পর্ণ।

ফারাহ মাহবুব বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষের আইনের আশ্রয় লাভ ও বিচারপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করাই বিচার বিভাগের ম‚ল দায়িত্ব। বিচার বিভাগ দেশ ও জনগণের আইনি ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে যাবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এর আগে ২৪ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। গত ২৫ মার্চ শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁদের নিয়োগ কার্যকর হয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া পঞ্চম নারী বিচারপতি।
প্রথা অনুসারে নবনিযুক্ত দুই বিচারপতিকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন দুই বিচারপতির কর্মময় জীবন তুলে ধরে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন।

আজকের সংবর্ধনায় ফারাহ মাহবুব বলেন, বাংলাদেশে মোট আইনজীবীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী আইনজীবী রয়েছেন, যাঁরা আদালতে মামলা পরিচালনায় প্রত্যক্ষ ভমিকা রাখছেন। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারী বিচারক মোট সংখ্যার ৩৫ শতাংশ, যাঁরা দক্ষতার সঙ্গে বিচারকার্য পরিচালনা করছেন।
দেশের উচ্চ আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বর্তমানে ১০ জন উল্লেখ করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, ‘এ সংখ্যা অদর ভবিষ্যতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ সংখ্যা বৃদ্ধি শুধু নারীর ক্ষমতায়নের জন্যই যথেষ্ট নয়, বরং সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা নিশ্চিতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপর্ণ। এমন অনেক মামলার বিষয়বস্তু রয়েছে, যেখানে বিশেষভাবে নারীরাই ভিকটিম অথবা বিচারপ্রার্থী হন। এসব ক্ষেত্রে নারী আইনজীবী বা নারী বিচারক বিচারকাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে বিচারপ্রার্থীর জন্য স্বস্তিদায়ক হয় এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও জনমুখী ও জেন্ডার ফ্রেন্ডলি করে তোলে।’শুরুতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, ‘গণতন্ত্রের বহুবিধ উৎকর্ষের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপ‚র্ণ হলো জনগণের অভিপ্রায়, বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিগত অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। যাঁদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা লাভ করেছে, সেসব বীর শহীদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা নিবেদন করছি সেসব মা-বোনের প্রতি, যাঁরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত হয়েছেন। একই সঙ্গে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁদের অসামান্য বীরত্ব ও দেশপ্রেমের চেতনা আমাদেরকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিকের মর্যাদা দিয়েছে।’

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আরও বলেন, ‘বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি জুলাই বিপ্লবের সেই সাহসী সন্তানদের, যাঁরা নিঃশঙ্ক চিত্তে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন রচনা করেছেন। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানে শামিল হয়ে যাঁরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, গণতন্ত্রের ভাবমর্তি সমুন্নত রাখার আন্দোলনে অংশ নিয়ে অকাতরে নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন, আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাঁদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।’